# ৫৭৬ আশ্রয়কেন্দ্রের অনেকগুলো অবৈধ দখল।
কক্সবাজার উপকূলের লোকজন এখনো ভুলেনি ১৯৯১ সালের ২৯ এপ্রিলের প্রলয়ংকারী ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতা। দিনটি এলেই যেন শোকের ছায়া নেমে আসে উপকূলের স্বজন হারানো পরিবারগুলোতে।
প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা মহেশখালীর মাতারবাড়ির চেয়ারম্যান এস এম আবু হায়দার জানান, ৯১ সালের ভয়াবহতার স্মৃতি এখনো ভুলতে পারেনি উপকূলের মানুষ। ওই ঘুর্নিঝড়ে ধলঘাটা-মাতারবাড়ির প্রায় প্রতিটি পরিবার চরম ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ৯০ ভাগ পরিবারের কেউ না কেউ ওই ঘুর্নিঝড়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। মৃতের সঠিক কোন হিসাব না থাকলেও স্থানীয়
লোকজনের হিসাবে প্রায় ৭ হাজার ছাড়িয়ে যাবে।
এপ্রিল মাস আসলেই নেমে আসে শোকের ছায়া। ওই ঘুর্নিঝড়ের প্রায় ৩৩ বছর অতিবাহিত হলেও অনেক পরিবার তাদের ক্ষতি পুষিয়ে আনতে পারেননি। এত ভয়াবহতা সত্ত্বেও এখনো স্থাপিত হয়নি পর্যাপ্ত সাইক্লেন শেল্টার। ঘুর্নিঝড় পরবর্তী সময়ে বিভিন্ন এনজিও ও সহযোগী সংস্থা কর্তৃক কয়েকটি সাইক্লোন শেল্টার নির্মিত হলেও তা পর্যাপ্ত নয়। সাইক্লোন শেল্টার গুলোর এমন অবস্থা হয়েছে যেগুলোতে লোকজন আশ্রয় নিতে ভয় পায়। সুতরিয়া বাজারের ও সরাইতলার সাইক্লোন শেল্টার এখন নেই। নতুনভাবে কোন সাইক্লোন শেল্টার এই এলাকায় নির্মিত হয়নি। বর্তমানে যা সাইক্লোন শেল্টার রয়েছে তার অধিকাংশই ব্যবহারের উপযোগী নয়। প্রাকৃতিক দূর্যোগের সময় মানুষ ওখানে উঠতে ভয় পায়।
৯১ সালের ঘুর্নিঝড়ে মা, বাবা, চাচা, ও দাদী হারনো মহেশখালীর ধলঘাটার সিকদার পাড়ার শওকত আলী বলেন, ২৯ এপ্রিলের দিনটি আমাদের জন্য খুবই বেদনাদায়ক। আমার পরিবারের ৮ সদস্যের মধ্যে কর্তা ব্যক্তিদের যারা বাড়িতে ছিলেন তারা সকলেই মৃত্যুবরন করেছেন। আমাদের বদুয়ার পাড়ায় মানুষ ছিল ১৬৫ জন। এর মধ্যে ঘুর্নিঝড়ে একই দিনে মৃত্যুবরণ করেছেন ১২৫ জন। মাত্র একটি পরিবার ছাড়া অপর সকল পরিবারের একাধিক সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। এই ভয়াবহ দিনটি আমাদের জন্য শোকের একটি দিন। শুধুমাত্র হারানোর বেদনা নিয়ে বেঁচে আছেন ধলঘাটার ১৪ হাজার মানুষ।
কুতুবদিয়ার আলী আকবর ডেইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আলম সিকদার জানান, ৯১ সালের সেই বেদনার স্মৃতি বয়ে বেড়াচ্ছেন অনেক পরিবার। ঘুর্নিঝড়ে বসতবাড়ী ও পরিবার পরিজন হারিয়ে অনেকেই আর কুতুবদিয়ায় ফিরে আসেননি। সেই দিনের ঘুর্নিঝড়ের থাবায় কুতুবদিয়ার মানচিত্র পর্যন্ত পাল্টে গেছে। স্থায়ী লোকজনের সংখ্যা ব্যাপক ভাবে হ্রাস পেয়েছে। তবে বেঁড়ীবাধে কিছু কাজ হওয়ায় অন্যত্র চলে যাওয়া লোকজন এখন ফিরে আসতে শুরু করেছে। প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই নির্মিত হয়েছে ২/৩টি করে সাইক্লোন শেল্টার কাম বিদ্যালয়। তবে আগের যেগুলো ছিল তার অধিকাংশই জবর দখল করে রেখেছে স্থানীয় প্রভাবশালীরা।
খোজ নিয়ে জানা গেছে, উপকূলীয় এলাকা এখনো ঝুঁকিপুর্ণ হলেও জেলায় ৫৭৬ টি সাইক্লোন শেল্টারের অনেকগুলোই এখন অবৈধ দখলে রেখেছেন প্রভাবশালীরা । সাইক্লোন শেল্টার দখল করে কেউ বানিয়েছেন গোয়াল ঘর, কেউ বানিয়েছেন বসতবাড়ী। কিছু সাইক্লোন শেল্টার ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।
গত ১৪ বছরে কক্সবাজারের উপকূলীয় এলাকায় অন্তত ৭৫টি সাইক্লোন সেল্টার কাম বিদ্যালয় নির্মিত হলেও তা পর্যাপ্ত নয় বলে মনে করেন উপকূলে বসবাসরত লোকজন। এ ছাড়া অবৈধ দখলে থাকা সাইক্লোন সেল্টারগুলো দখল মুক্ত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিকি মারমা বলেন, অবিলম্বে ঝুঁকিপূর্ণ সাইক্লোন শেল্টার আছে কিনা যাচাই করা হবে। কেউ অবৈধ দখল করে থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
আশেক উল্লাহ রফিক এমপি বলেন, এপ্রিল মাসটি উপকূলবাসীর জন্য বেদনাদায়ক একটি দিন। ২৯ এপ্রিল মৃত্যু বরণ করেছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। আমি সকল শোকাহত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জনাই। আশাকরি অচিরেই মহেশখালী ও কুতুবদিয়া উপকূল শতভাগ সুরক্ষিত হবে।
পাঠকের মতামত: